কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

হচ্ছে না তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা

 

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা এবছরও অনুষ্ঠিত হবে না। একই কারণে গত দু’বছরও
ইজতেমা হতে পারেনি।

তাবলিগ জামাত সূত্রে জানা গেছে, তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হলে জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে সরকারের কাছে ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাবলিগ জামাতের সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি নির্দেশনার কারণে তাবলিগের দু’পক্ষই ইজতেমার আয়োজন থেকে সরে আসে।

প্রতি বছর সাধারণত জানুয়ারি মাসে শীতে মৌসুমে বিশ্বের ৫০ থেকে ৬০টি দেশের দ্বীনদার মুসলমানদের সমাবেশ ঘটে বিশ্ব ইজতেমায়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত বছর তা আর হয়ে উঠেনি। পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় তা এ বছরও হচ্ছে না ।

রোববার রাতে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইজতেমা আয়োজন সম্ভব নয়। কয়েক মাস আগে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ। সরকারি-বেসরকারি সব অফিসে অর্ধেক জনবল দিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই সংক্রণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এত বড় জমায়েত করাটা ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, এত বড় একটা আয়োজন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসে। এসব দেখার বিষয় আছে। স্বাস্থ্যের বিষয়টা অত্যন্ত জরুরি।

তাবলিগ জামাতের নেতারা বলছেন, ইজতেমার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এ বছরও ইজতেমার আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে তিন চিল্লার সাথীদের জোড় শেষে সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে এ বছরের ২৮,২৯ ও ৩০ জানুয়ারি ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করে তাবলিগের জুবায়েরপন্থী অংশ (আলমী শুরা)। তবে সরকারিভাবে ইজতেমার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আপাতত আর ইজতেমা আয়োজন করা হয়নি।

অন্যদিকে জোড় থেকে চিল্লার জন্য বের হওয়া জামাতগুলো নির্ধারিত সময় শেষে ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হন। সেখানে মুরব্বিরা দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করেন। এখান থেকে আবার নতুন করে এক চিল্লাসহ বিভিন্ন মেয়াদে জামাত বের হয়।

তাবলিগের এ অংশের একজন শীর্ষ মুরব্বি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইজতেমা না হলেও আমাদের জামাতগুলো আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছে। ইজতেমার আয়োজনটা মূলত হয় যেন বেশি বেশি জামাত বের হয়। সে লক্ষ্যে টঙ্গী ময়দান ও কাকরাইল মসজিদ থেকে চিল্লার জামাতের জন্য সাথীরা বের হয়েছেন।

তাবলিগের মাওলানা সাদপন্থী অংশের মুরব্বি মাওলানা আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, গতবছর যেহেতু ইজতেমা হয়নি। তাই সবার আশা ছিল, এ বছর যেন হয়। এ জন্য আমরা প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে করোনা পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হলো-এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গত অক্টোবর থেকে দেশের অধিকাংশ জেলায় আমারা জেলাওয়ারী ইজতেমা করেছি। সেখান থেকে অসংখ্য জামাত বেরিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় এখন ইজতেমা বা জমায়েত না করে আমরা এখন বেশি জামাত বের করার চেষ্টা করছি।

তবে ২০২১ সালের শীতকালে বাংলাদেশে করোনা মহামারী সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। পরবর্তীতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আর হয়নি ২০২১ সালের বিশ্ব ইজতেমা। লাখো আল্লাহ প্রেমীর তাকবির ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত হয়নি টঙ্গীর তুরাগ তীর। টঙ্গীতে বৃহত্তম জুমার নামাজের দৃশ্যও দেখতে পায়নি বিশ্ববাসী।

১৯৬৭ সালে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমা প্রতি বছর শীতকালীন সময় জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক লাখ লোকের জমায়েতের কারণে বিশ্ব ইজতেমাকে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মিলন বলা হয়।

প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হলেও তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ২০১৯ ও ২০২০ সালে তা বিলম্বিত হয়। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি মাসে দু’পক্ষ দুদিন করে চার দিন ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা পালন করে।

পাঠকের মতামত: